বৈরি আবহাওয়ায় দিনাজপুরের চাষীরা বিপাকে
ভূপেন্দ্র নাথ রায়,দিনাজপুর প্রতিনিধি:
ঝড়বৃষ্টির কারণে দিনাজপুরের কৃষকরা মহাবিপাকে পড়েছে। টানা বৈরি আবহাওয়ায় তাদের কষ্টের ফসল ঘরে তুলতে হিমশিম খাচ্ছে। কৃষি নির্ভর এ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় রবি ও খরিপ-১ শস্য চাষীরা খুব দু:চিন্তায় আছে। এ জেলার রবি ও খরিপ মৌসুমের প্রধান ফসল রসুন, গম, পেঁয়াজ, ভুট্টা, শসা, ইরি, পাট। রবি শস্য ঘরে তুলতে না তুলতেই আবার বৃষ্টিপাত, বৈরি আবহাওয়া।
দিনাজপুরের বিস্তির্ণ এলাকাজুড়ে বীরগঞ্জ, কাহারোল, সেতাবগঞ্জ, সদর, চিরিরবন্দর এবং খানসামায় ব্যাপকভাবে ভুট্টার চাষ করা হয়। এই ভুট্টা নভেম্বর/ডিসেম্বর মাসে রোপন করা হয়। যদিও মার্চ থেকে ভুট্টা সংগ্রহ শুরু হয়েছে, এপ্রিল মাস ভুট্টা সংগ্রহ করার মূল সময়। এ সময় বেশিরভাগ ভুট্টা পরিপক্ক হয়ে মোঁচা শুকিয়ে গেছে। অনেক চাষী বৃষ্টির ফাঁকে ভুট্টার মোঁচা সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্ত রোদ না ওঠার কারণে সংগৃহিত মোঁচা রোদে শুকাতে পারছে না। প্রতিদিন প্লাস্টিক কাগজ দিয়ে মোঁচার (ভুট্টা) গাদা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আবার আকাশ একটু ভালো হতেই খুলে দেওয়া হচ্ছে। তারপরও তারা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদের কষ্টার্জিত ফসল ঘরে তুলতে।
কিছু চাষী অতি বৃষ্টির ফলে তাদের ভু্ট্টা সংগ্রহ করতে যেতেই পারছে না। ভুট্টার মোঁচা গাছ থেকে সংগ্রহ করতে না পারায় কালো হয়ে যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে মোঁচা থেকে চারা গাছ বের হচ্ছে। ভুট্টা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় না শুকানো হলে খৈ ফুটে না। খৈবিহীন এ ভুট্টা গো- খাদ্য ছাড়া আর কিছু হয় না। খানসামার ভুট্টা চাষী মজিবর, রহমান, ময়নুল, আছির, সুবাস, ছকি এর সাথে কথা বললে এরা জানায়, ‘ভুট্টার মোকছা ১০ দিন আগে পাকিসে, কিন্তু ঝড়বৃষ্টির জন্য ভুট্টা ছিড়ির পাচ্ছি না’। আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় কাচা ভুট্টা মাত্র ১৮-২০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দিনাজপুর সদর আমবাড়ীর জাহাঙ্গীরের সাথে কথা বললে সে জানায়, তুমুল ঝড়বৃষ্টির কারণে ইরি ধানের পরাগায়ণে সমস্যা হচ্ছে। ইরিধান বাতাসে হেলে পড়ছে। এ বিষয়ে চিরির বন্দর উপজেলার কৃষকরা বিশেষ করে যারা ইছামতি নদীর দুপাশে ইরির চাষ করছে, তারা গভীর উৎকন্ঠায় আছে। যে কোনো মুহূর্তে তাদের ইরি ধান পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে।
এদিকে সেতাবগঞ্জের রবিউল ইসলামের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার তার আমবাগান ও লিচুবাগানে প্রচুর মুকুল এসেছে। কিন্তু অতি বৃষ্টি এবং ঘনঘন ঝড়ের কারণে আম, লিচুর মুকুল ঝরে যাচ্ছে। লিচু ব্যবসায়ী লিটন জানান, ‘প্রথমে গাছে প্রচুর মুকুল আসায় আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম এবার লিচুতে লাভ হবে কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে মনে হয় আসল টাকাটাই উঠে আসবে না’।
এদিকে বীরগঞ্জের কৃষক ভবতোষ, হাসু, খানসামার রমানাথ, রহিদুল, দুলাল, অহিমুদ্দিন, চিরিরবন্দরের তুষার, আফসার উদ্দীনরা জানান, তারা গম, আলু, রসুনের জমিতে পাট চাষ করেছেন কিন্তু পাটক্ষেতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে। কোনো দিকে পানি বের করার উপায় নেই। ফলে পাটের কচি চারা পঁচে যাচ্ছে।
কৃষকরা দিন গুনছেন কবে আবহাওয়া ভালো হবে, কবে তাদের পরিশ্রমের ফসল ঘরে তুলতে পারবে। এ নিয়ে কৃষকদের উদ্বেগ উৎকন্ঠার অন্ত নাই।